শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ বরগুনায় সূর্যদ্বয়ের প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণ

আজ ঐতিহাসিক ৭-ই মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে জনতার এমপি মাননীয় সাংসদ জনাব গোলাম সরোয়ার টুকুর পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নেতা-কর্মীরা।

দেশ ভাগের পর ২৩ বছরের ইতিহাসে অনেক ভাষণ জাতি শুনেছে, জাতির উদ্দেশে দেওয়া হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের তো বটেই, আরও অনেক নেতার। কিন্তু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ওই একটি মাত্র ভাষণ দেশ ও জাতির দিকনির্দেশক ভিত্তি, বিশ্বের দালিলিক ঐতিহ্য, যা বাঙালি জাতির গর্ব। এমনকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যতগুলো ভাষণ আছে তন্মধ্যে ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম। বিশ্বের এক অনন্য বক্তৃতা আলেখ্য।

৭ মার্চের ভাষণটি বঙ্গবন্ধুর extempore speech হলেও যে বিষয়টি লক্ষণীয় ও উপস্থিত বক্তৃতার সচরাচর পরিদৃষ্ট হয়ে থাকে তা থেকে ব্যতিক্রম ছিল। তাতে বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি, শব্দচয়নে মুহূর্তের দ্বিধাগ্রস্ততা কিছুই ছিল না। এমনকি ভাষণটির কোনো স্ক্রিপ্টও ছিল না। মঞ্চে উঠার আগে গাড়িতে ড্রাইভার হাজী মোর্শেদ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন- ‘আপনি ভাষণে কী বলবেন কিছুই তো লিখে আনেননি।’ মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল আস্থায় প্রতি উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-‘দেখি আল্লায় কী বলায়’।

জাতির প্রতি সত্যনিষ্ঠ অঙ্গীকারে সেদিন বঙ্গবন্ধু মহাকাব্যিক বাণীতে জাতিকে বিমোহিত করেছিলেন। মুগ্ধ চিত্তে জাতি ফিরে গিয়েছিল শাণিত স্বাধীনতা চেতনার প্রতিজ্ঞা নিয়ে।

‘ভায়েরা আমার’ নিখাদ সম্বোধনে উপস্থিত ১০ লক্ষাধিক এবং দেশের সমগ্র জাতির হৃদয়ে ঢুকে গিয়েছিলেন শেখ মুজিব। সমগ্র ভাষণে তিনি সক্রেটিসের তর্কের ধারা অনুসরণ করেছিলেন। একটির পর একটি প্রশ্ন, একটার পর একটা যুক্তি অবতারণা করে স্বেচ্ছাচারী স্বৈরাচারের খুঁতগুলো জাতির সামনে তিনি স্পষ্ট করে তুলেছিলেন।

ক্ষুরধার যুক্তির খাতিরেই তিনি শূন্যগর্ভ শব্দে বা Hollwo claptrap-এ বিশ্বাসী ছিলেন না। এই ভাষণে রাজনীতির কোনো মারপ্যাঁচ ছিল না। দুর্বোধ্য কোনো শব্দও তিনি ব্যবহার করেননি। ভাষণে কোনো অলঙ্কার ব্যবহার করেননি। নিতান্ত আটপৌরে আমাদের ঘরের শব্দগুলোই তিনি ব্যবহার করেছিলেন। ভাষণের শেষে পিতার মতোই জাতির কাছে ঋদ্ধ মননে বঙ্গবন্ধু অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তিনি জেনে-বুঝেই বলেছিলেন- ‘এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাহ আল্লাহ’। এই ‘ইনশাহ আল্লাহ’ কথাটির মাহাত্ম্য পবিত্র কুরআন শরীফের ‘সুরা কাহাফ’- এ উল্লেখ।

অর্থাৎ, অঙ্গীকারমূলক কোনো কথা বললে বা অঙ্গীকার করলে ‘ইনশাহ আল্লাহ’ বলা। জাতির পিতা হিসেবে এর চেয়ে বড় অঙ্গীকার আর কী হতে পারে? শেখ মুজিব সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেছিলেন। ১৮ মিনিটের এই ভাষণ, মিনিটে দুশো-আড়াইশো শব্দের মন্ত্রবাণীর ব্যঞ্জনা, ছন্দ এমন ছিল যে, ভাষণের একটি শব্দ পরিবর্তন করলেই যেন সমস্ত ভাষণটার অঙ্গহানি হতো। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসী ঐশ্বরিক মহানায়কের অকৃত্রিম নেতৃত্বগুণ, দেশপ্রেমে হৃদয় থেকে উৎসারিত ভাষণের প্রতিটি কথা বাঙালি জাতির হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল।

কাব্যময় এই ভাষণের জন্যই আন্তর্জাতিক সাময়িকী নিউজউইক তখনই শেখ মুজিবকে অভিহিত করেছে- ‘poet of politics’ বলে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটির শব্দের ব্যবহার বিশ্লেষণ করলে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসনের বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন- ‘The most valuable of all telents is that of never using two words when one will do’. তাই একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণ বাংলা ভাষায় শুধু শ্রেষ্ঠ ভাষণ নয়, পৃথিবীর এক অন্যতম ভাষণ, একটা জাতির মহাকাব্যিক দলিল। এই একটিমাত্র ভাষণেই শেখ মুজিবকে বলা যায় তিনি সেই মহামানব, সময় যাঁকে সৃষ্টি করেনি, যিনি সময়কে নিজের করতলে নিয়ে এসেছেন। যা যুগ যুগ ধরে বাঙালিকে পথ দেখাবে।
একাত্তরের এই মার্চে স্বাধীনতাকামী বাঙালির চূড়ান্ত আন্দোলনে কর্মসূচির বিভিন্ন ধাপ অতিবাহিত হয়। তন্মধ্যে ২৬ মার্চ শুরুর প্রথম ক্ষণে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা জাতি পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুখেই। তবে ৭ মার্চ ভাষণ ছিল মার্চে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সকল ধাপ, পর্যায়ের, নির্দেশনার এক মহাকাব্যিক বাণী। যে বাণীতে সমগ্র জাতি হয়েছিল উদ্দীপ্ত। এই উদ্দীপনায় দেশমাতৃকার টানে বাঙালির মনে ছিল শুধুই জাতির পিতার আদেশ-নির্দেশ, মুখে ছিল জয় বাংলা।

মন্ত্রমুগ্ধের মতো মর্মবাণীর এই ভাষণটির জন্য বঙ্গবন্ধুর পূর্ব কোনো দালিলিক প্রস্তুতি ছিল না এটা যেমন সত্য, তাঁর সহধর্মিণী তথা শেখ মুজিবের উত্থানের নিভৃত একক কারিগর বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৬ মার্চ রাতে ৩২ নম্বরে মুজিবের উদ্বিগ্ন পায়চারিতে কথাটা ছিল- ‘সারা জাতি তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, তোমার যেটা মনে আসে তুমি সেটাই বলো ভাষণে’

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

স্বত্ব © 2024 বিডি পোস্ট ৭১